
তারেক রহমান: একজন দূরদর্শী নেতা ও বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক সংগ্রাম
February 2, 2025বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) গণতন্ত্র, জনগণের অধিকার এবং ন্যায়ের রাজনীতির জন্য দীর্ঘদিন লড়াই করে আসছে। বিশেষ করে, ২০২৪ সালের গণবিক্ষোভের পর রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে বিএনপি নতুন চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছে। তবে দলটি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে দৃঢ় সংকল্পবদ্ধ। এই লেখায় বিএনপির বর্তমান চ্যালেঞ্জ, সম্ভাব্য কৌশল এবং ভবিষ্যতের পরিকল্পনা বিশদভাবে আলোচনা করা হবে।
১. বর্তমান রাজনৈতিক চ্যালেঞ্জ
(ক) দমন-পীড়ন ও দলীয় নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন
গত এক দশকেরও বেশি সময় ধরে বিএনপি নেতাকর্মীরা দমন-পীড়নের শিকার হয়েছেন। গণগ্রেফতার, গায়েবি মামলা, পুলিশি হয়রানি, এমনকি বিচারবহির্ভূত নির্যাতনও দলটির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। ২০২৪ সালের গণআন্দোলনে পুলিশের গুলিতে শতাধিক মানুষ নিহত হয়, হাজার হাজার কর্মী গ্রেফতার হন।
(খ) প্রশাসনিক ও বিচার বিভাগের দলীয়করণ
সরকার দীর্ঘদিন ধরে প্রশাসন ও বিচার বিভাগকে দলীয়করণ করেছে। ফলে বিএনপি বা বিরোধী দলের কোনো দাবিকে ন্যায়বিচার পাওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে।
(গ) ভুয়া নির্বাচন ও রাজনৈতিক বৈধতার সংকট
বিএনপি বিগত কয়েকটি নির্বাচনকে অবৈধ বলে দাবি করেছে, কারণ আওয়ামী লীগ প্রশাসনকে ব্যবহার করে ভোট ডাকাতি করেছে। ২০২৪ সালের আন্দোলনও ছিল নির্দলীয় সরকারের অধীনে সুষ্ঠু নির্বাচন আদায়ের জন্য, যা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি।
২. গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কৌশল ও ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
(ক) জনসম্পৃক্ত আন্দোলন জোরদার করা
বিএনপি জানে, কেবল রাজনৈতিক কর্মসূচি নয়, বরং জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করাই সফলতার মূল চাবিকাঠি। এজন্য দলটি এখন grassroots আন্দোলনকে শক্তিশালী করছে।
- ইউনিয়ন পর্যায়ে সংগঠন শক্তিশালী করা
- তরুণদের রাজনৈতিকভাবে সচেতন করা
- ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মে সত্য প্রচার করা
(খ) আন্তর্জাতিক চাপ সৃষ্টি করা
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের জন্য বিএনপি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে কাজ করছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসংঘ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশগুলোর কাছে ন্যায়বিচার ও সুষ্ঠু নির্বাচনের দাবি জানানো হচ্ছে।
(গ) নির্বাচনী সংস্কার ও অন্তর্বর্তীকালীন সরকার প্রতিষ্ঠা
বিএনপি “টেক ব্যাক বাংলাদেশ” নীতির আওতায় ৩১ দফা সংস্কার প্রস্তাব দিয়েছে। এর মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যবস্থা, ইসির নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করা এবং বিচার বিভাগের স্বাধীনতা অন্যতম।
(ঘ) যুব ও নতুন প্রজন্মকে সম্পৃক্ত করা
বর্তমান প্রজন্ম রাজনীতিতে নতুন ধারা চায়। বিএনপি তরুণদের সম্পৃক্ত করতে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম, কর্মশালা, ও প্রশিক্ষণের মাধ্যমে রাজনৈতিক সচেতনতা বৃদ্ধি করছে।
৩. বিএনপি কি গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে পারবে?
বিএনপির গণতান্ত্রিক আন্দোলন নতুন মাত্রায় পৌঁছেছে। শত বাধা সত্ত্বেও, জনগণের সমর্থনই দলটির সবচেয়ে বড় শক্তি। ইতিহাস প্রমাণ করেছে, জনগণের ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই স্বৈরতন্ত্রের পতন ঘটায়।
তাই, বিএনপি তার আদর্শের পথে অবিচল থেকে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের লড়াই চালিয়ে যাবে।
উপসংহার
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে বিএনপি এক কঠিন সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। তবে দলটির সুপরিকল্পিত কৌশল, জনগণের সমর্থন এবং আন্তর্জাতিক মহলের চাপ একত্রে কাজ করলে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার সম্ভব হবে। বিএনপির ভবিষ্যৎ নির্ভর করছে দলটির সাংগঠনিক শক্তি, কৌশলী আন্দোলন এবং জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার ওপর।
গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের এই লড়াইয়ে বিএনপি কতটা সফল হবে, তা সময়ই বলে দেবে। তবে একথা নিশ্চিত যে, জনগণ যখন একবার পরিবর্তনের জন্য তৈরি হয়, তখন কোনো শক্তিই তাদের থামাতে পারে না।